গোদ রোগ বা ফাইলেরিয়াসিস (Filariasis) এক প্রকার পরজীবী ঘটিত রোগ। এটি ক্রান্তীয় অঞ্চলের সংক্রামক রোগ যা সূতার মতো একজাতের (ফাইলেরিওয়ডিয়া Filarioidea পরিবারভুক্ত নিমাটোড) গোলকৃমি দ্বারা সংঘটিত হয়।
ফাইলেরিয়ার জীবন চক্র
ফাইলেরিয়া নামক গোল কৃমির জীবন চক্রকে পাঁচটি ধাপে ভাগ করা যায়। মানবদেহের ভেতর পুং ও স্ত্রী ফাইলেরিয়ার মিলনের পর হাজার হাজার মাইক্রোফাইলেরিয়ার জন্ম হয়। মশা যখন রক্ত পান করে তখন এগুলো মশার পেটে চলে যায়। মশার ভেতর এরা খোলস পালটায় এবং লার্ভায় পরিণত হয়। সেই মশা যখন আবার মানুষের রক্ত খেতে যায় তখন লার্ভাগুলো মানবদেহে প্রবেশ করে। পরবর্তী এক বছরে সেই লার্ভাগুলো আরো দুইবার খোলস পালটিয়ে দুটি ধাপ অতিক্রম করে এবং পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়।এরা লসিকা নালী ও গ্রন্থিতে বাসা বাঁধে এবং লসিকা প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে। ফলে শরীরের আক্রান্ত অংশে লসিকে জমে গিয়ে ফুলে যায়। এটাই গোদ রোগ। মাইক্রোফাইলেরিয়াগুলো মানুষের রক্তে ভেসে চলে।
লক্ষণ সমূহ
শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে যাওয়া, চামড়া ও এর নিচের টিস্যু মোটা হয়ে যাওয়া -এগুলোই প্রধান লক্ষণ যা মশার কামড় দ্বারা সংক্রমিত রোগ হিসেবে প্রথম চিহ্নিত করা হয়েছিল। এই ফুলে যাওয়াকে এলিফেনটায়াসিস বলা হয়। যখন পরজীবী কৃমিগুলো মানুষের লসিকা তন্ত্রে (lymphatic system) বাসা বাঁধে তখনই এলিফেনটায়াসিস হয়।
ফুলে যাওয়াটা পায়েই বেশি হয়। অবশ্য ভিন্ন ভিন্ন জাতের ফাইলেরিয়া-কৃমি ভিন্ন ভিন্ন অঙ্গে বাসা বাঁধে। Wuchereria bancrofti নামের প্রজাতির ক্ষেত্রে প্রধানত ফুলে ওঠে পা, বাহু, নারী-যৌনাঙ্গ, স্তন, অন্ডকোষ ইত্যাদি। Brugia timori নামক প্রজাতির ক্ষেত্রে যৌনাঙ্গ আক্রান্ত হয় কমই।
প্রতিরোধ ও প্রতিকার
যেহেতু ফাইলেরিয়া কৃমি মশার কামড় দ্বারা সংক্রমিত ও বিস্তৃত হয় তাই মশা দমন একটি কার্যকর প্রতিরোধের উপায়। এছাড়া ম্যাস ড্রাগ ট্রিটমেন্ট বা ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে ওষুধ প্রয়োগ করেও রোগটির বিস্তার কমানো যায়। এজন্য ডাই ইথাইল কার্বামাজিন এবং এলবেন্ডাজোল একত্রে দড় করা হয়। এছাড়া এলবেন্ডাজোল ও ইনভারমেকটিন একত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে। এসব চিকিৎসা শুধু মাইক্রো ফাইলেরিয়ার উপর কার্যকর। পূর্নবয়স্ক ফাইলেরিয়ার উপর এগুলো কাজ করেনা।
এলিফেন্টায়াসিস একবার হয়ে গেলে এর কোনো চিকিৎসা নেই। অনেক সময় অঙ্গ কেটে ফেলার প্রয়োজন হয়। তবে অন্ডকোষ আক্রান্ত হলে শল্য চিকিৎসায় ভাল ফল পাওয়া যায়।
বিস্তৃতি
ফাইলেরিয়াসিস রোগটি এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার ক্রান্তীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলে দেখা যায়। এসব অঞ্চলের ১২ কোটি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত এবং আরো ১০০ কোটি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকিতে আছে। যেসব অঞ্চলে এই রোগটি বিদ্যমান সেখানকার শতকরা দশ ভাগ নারী হাত বা পা ফোলায় আক্রান্ত এবং শতকরা পঞ্চাশ ভাগ পুরুষ জননাঙ্গের বৈকল্যে আক্রান্ত হতে পারেন। দুনিয়ার তিরাশিটি দেশে রোগটি আছে (এনডেমিক)। তার মধ্যে উনচল্লিশটি দেশ আফ্রিকায়। আমেরিকার সাতটি দেশে এটি আছে, যথাঃ ব্রাজিল, কোস্টা রিকা, ডমিনিকান রিপাবলিক, গায়ানা, হাইতি, সুরিনাম এবং ত্রিনিদাদ ও টোবাগো।
মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি দেশে এটি আছে, যথাঃ মিসর, সুদান এবং ইয়েমেন।
এশিয়াতে আছে বাংলাদেশ, ক্যামবোডিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, পূর্ব তিমুর এবং ভিয়েতনামে। বাংলাদেশের উত্তরাংশের তেরটি জেলায় এই রোগটি আছে। এদেশের দুই কোটি মানুষ এই রোগের ঝুঁকিতে আছেন, এক কোটি মানুষের দেহে মাইক্রোফাইলেরিয়া আছে এবং আরো এক কোটি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে কিছু না কিছু শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আক্রান্ত দেশগুলো হলো- সামোয়া, কুক আইল্যান্ড, ফিজি, ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়া, মাইক্রোনেশিয়া, নিউ, আমেরিকান সামোয়া, টোঙ্গা, তুভালু, পাপুয়া নিউ গিনি এবং ভানুয়াতু।
এসব দেশগুলোর অনেকগুলোতে ইতিমধ্যে ফাইলেরিয়াসিস নির্মূল অভিযান সফলভাবে চালানো হয়েছে।
York Hospital Ltd.
House #12 & 13, Road # 22, Block # K, Banani, Dhaka-1213
Phone: 01992222555, 01992222777