হরমোন হলো আমাদের শরীরে বিভিন্ন গ্রন্থি। এখান থেকে তৈরি হওয়া কিছু কেমিক্যাল, যেগুলো বিভিন্ন গ্ল্যান্ড থেকে তৈরি হয়ে রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। হরমোনের মাধ্যমে শরীরের সব ধরণের কার্যক্রম, গ্রোথ ডেভেলপমেন্ট হয়। শরীরের সবকিছুর সাথেই হরমোনের সম্পর্ক রয়েছে। হরমোনে সমস্যার কারণে শরীরে হতে পারে নানা ধরণের সমস্যা।
হরমোনের ধরণ, কাজ ও হরমোন রোগের প্রভাবে বন্ধ্যাত্ব নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছেন হরমোন, ডায়াবেটিস ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সুলতানা মারুফা শেফিন।
হরমোনের ধরণ ও কাজ:
ঘুম থেকে জেগে ওঠার ক্ষেত্রে একটি হরমোন রয়েছে। ইংরেজিতে যাকে বলা হয় কেমিক্যাল ম্যাসেঞ্জার। এগুলো গ্রন্থি থেকে তৈরি হয়ে একজন আরেকজনকে মেসেজ পাঠায় যে, তোমাকে এই কাজটি করতে হবে। তারপর তাকে সাহায্য করে এবং কাজগুলো করিয়ে নেয়।
হরমোনগুলো আবার অনেকগুলো নিয়ম-শৃঙ্খলায় আবদ্ধ। প্রথম হরমোন তৈরি হয়, ব্রেন থেকে। ব্রেনের হাইপোথেলামাস নামক অংশ আছে। সেখান থেকে হরমোন তৈরি হয়। প্রিটোরিগ্রান্ট অংশে চলে আসে। যা আমরা দুইভাবে ভাগ করি। একটি সামনে, আরেকটি পেছনে পিঠে তৈরি। এটা খুবই ছোট একটা অংশ। যার ওজন ১০ থেকে মাত্র ১২ গ্রাম।
এন্টিনোকট্রিকো সামনের অংশ থেকে ছয়টা হরমোন তৈরি হয়। পেছনের অংশ থেকে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন তৈরি হয়। পিটুইটার সামনের অংশ থেকে যে হরমোন তৈরি হয়, তারা সরাসরি কাজ করে বা অন্যান্য গ্রন্থিকে বার্তা পাঠায়।
অ্যান্টিনোকট্রিকো হরমোন ট্রাফিক আমাদের কিডনির সাথে সম্পর্কিত। তার উপরে রয়েছে সুপার অ্যানাল গ্রেন্ড।
সুপার অ্যানাল গ্রেন্ডের আবার দুটি অংশ। কটেক্স, আরেকটা হচ্ছে প্রিনোটার। এগুলো আমাদের রক্তের ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে। লবণের ওপর কাজ করে এবং সেক্স হরমোন তৈরি করে।
সেক্স হরমোনের সাথে ছেলে বা মেয়েদের বিষয়টি জড়িত। সেক্স হরমোনের শুরুটা প্রিটোটারি হরমোন থেকে আসে। প্রিটোটারি এইচএফএস এবং এলএস হরমোন। দু’টি হরমোনই মেয়েদের ক্ষেত্রে ওভারির উপর কাজ করে। ওভারি থেকে মেয়ে হরমোন ইস্ট্রোজেন প্রস্ট্রেশন তৈরি করে। আর ডিম্বাণু তৈরি করে।
পুরুষদের ক্ষেত্রে অন্ডকোষের ওপর এসে কাজ করে। শুক্রাণু তৈরি করে। অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে কিছু পরিমাণ সেক্স হরমোন তৈরি করে। এই ধরণটির প্রভাবে মেয়েদের শরীরে কিছুটা ছেলেদের হরমোন থাকে। যখন সেটা ভারসম্যহীন হয়ে যায়, তখনই নানারকম উপসর্গ তৈরি হয়।
থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন। এসএইচ হরমোনটা এসে কাজ করে থাইরয়েডের উপর। থাইরয়েড থাকে আমাদের গলার সামনের দিকে। এগুলো প্রত্যেকটি কোষে কাজ করে।
হরমোনজনিত সমস্যায় হতে পারে বন্ধ্যাত্ব:
হরমোন সমস্যায় বন্ধ্যাত্ব গুরুত্বপূর্ণ একটি রোগ। বাবা হওয়ার জন্য টেস্টেস্টেরন এবং শুক্রাণু দু’টোই প্রয়োজন।
হাইপোথাইরয়েডিজম মানে হচ্ছে থাইরয়েডের কম কাজ করা। আর হাইপার থাইরয়েডিজম মানে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড বেশি কাজ করে। হাইপোথাইরয়েডে সাধারণত টিএসএইচ বেড়ে যায়। হাইপার থাইরয়েডের সাধারণত টিএইচএস হরমোন কমে যায়।
থাইরয়েড হরমোন বন্ধ্যাত্বের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। মেয়েদের ক্ষেত্রে ডিম্বাণু আর পুরুষদের ক্ষেত্রে শুক্রাণুর ওপর প্রভাব ফেলে। প্রোল্যাকটিন একটা হরমোন। এ হরমোন জেনেটিক কাজ করে। মেয়েদের বাচ্চা হওয়ার পরে ব্রেস্ট থেকে দুধ তৈরি করে।
কোন কারণে যদি এ হরমোন বেড়ে গেলে অবিবাহিত মেয়েদের অথবা যে মেয়েরা গর্ভধারণ করেনি অথবা বৃদ্ধ বয়সেও দুধ নিঃসরণ হতে পারে। এটাকে বলে হাইফা প্রলাক্টিন এনিমা।
প্রলাক্টিন হরমোনের গন্ডগোল। এটাও বন্ধ্যাত্বের সাথে জড়িত। প্রোল্যাকটিন হরমোন বেড়ে গেলে মেয়েদের ঠিকমত ডিম ফোটে না। ছেলেদের ক্ষেত্রে দুধ নিঃসরণ হয়না। তবে তাদের ক্ষেত্রেও বন্ধ্যাত্ব আসতে পারে। আমরা যখন বীর্য পরীক্ষা করি, সেখানে হরমোনের প্রভাবের বিষয়টি ধরা পড়তে পারে।